এর কান্না নিয়ে মায়েদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। কেন এতো কাঁদে? কি তার কষ্ট? নাকি কোন অসুখ বিসুখ হাজারো চিন্তায় ব্যাকুল মা
চিন্তিত এসব মায়েদের জন্য সুখবর হলো- দেখা গেছে, যে সকল শিশু জন্মের পর থেকেই খুব কান্না কাটি করে তাদের অধিকাংশের কান্নার কারণ কোন রোগ নয়। মজার ব্যাপার হলো, কান্নার মাধ্যমেই শিশু এ সময়ে কমিউনিকেট করে। আদর যত্ন চায়। ক্ষুধা পেলে খাবার চায়। প্রস্রাব পায়খানায় বিছানা ভিজে গেলে অ বোধ করে। কান্নার মাধ্যমেই সে সেটা প্রকাশ করে। পেটে ব্যাথা হলে কিংবা অন্য কোন অসুখ বিসুখে আক্রান্ত হলে শিশু সারাক্ষণ। কান্না কাটি করতে পারে। কোন প্রকার রোগ ব্যাধির লক্ষণ যদি না থাকে এবং যধের যত্ন আত্তি গড়েও অতিরিক্ত মাত্রায় কাঁে সেক্ষেত্রে মাকে ধৈর্য ধরতে হবে। বয়স ৩-৪ মাসে পৌছালেই এ ধরনের কান্না কমতে থাকে।
মুধা লাগলে কিংবা পিপাষা পেলে শিশু কাঁদতে পারে। ৬ মানের কম বয়সী হলে মায়ের বুকের দুধ দিবেন। ৬ মাসের বেশী বয়স হলে বুকের দুধের সাথে অন্য খাবারও দিতে পারেন। শিশু কোন কারণে আনকমফোর্টেবল ফিল করণে কাঁদতে পারে। বিছানা আরামদায়ক না হলে কিংবা তার পজিশন আরামদায়ক না হলে। শোয়া অবস্থায় থাকুক কিংবা কোলে থাকুক তার পলিশন চেঞ্জ করে দিবেন। অনেক সময় খাওয়ার পর পেটে গ্যাস জমে। এতেও শিশু কাঁদতে পারে। এ অবস্থায় নার্সিং করাতে হবে। শিশুকে কাঁদের উপর নিয়ে পিঠের উপর হাতের তালু দিয়ে আস্তে আস্তে চাপ দিতে হবে। পায়খানা করলে কিংবা প্রস্রাব করলে শিশু কাঁদতে পারে। তার ডায়াপার চেষ্ট করে দিন।
ডায়াপারের পিন খোলা থাকলে শিশু আঘাত পেতে পারে। কান্না করতে পারে। ভায়পারের পিন অবশ্যই বন্ধ রাখুন। খুব বেশি জামা কাপর পরিয়ে রাখলে বাচ্চা গরমে কাঁদতে পারে। আবার কম জামা কাপর পরিয়ে রাখলে শীতের জন্যও
কাঁদতে পারে। রুম খুব বেশি গরম হয়ে গেলে শিশু অস্বস্তিবোধ। করতে পারে। আপনাকে আবহাওয়া বুঝে শুনেই ডিসিশন নিতে হবে বাচ্চাকে কি ধরণের কাপর চোপর পরাবেন। সেটা হতে হবে অবশ্যই সুতির কাপর। অনেক সময় নামার গেল বা ফিতা বাচ্চার হাত পায়ের আঙুলে পেচিয়ে গেলে বাচ্চা কাঁদতে পারে।
বাচ্চা অনেক সময় একাকিত্ব বোধ করলেও কান্না কাটি করে। বাচ্চাকে তাই কাছে রাখবেন। নিজের বিছানায় রাখবেন। বাচ্চার সাথে কথা বলার চেষ্টা করুন। তাকে গান শুনাতে পারেন। শুনাতে পারেন কোন মিউজিক কিংবা ছন্দময় কোন শব্দ যেমন হতে পারে মোবাইলের রিও টোন। একটু বড় বাচ্চা হলে হাটাতে চেষ্টা করান। দেখবেন কন্না থেমে গেছে। খুব বেশি অস্বস্তি বোধ করলে একটা আরামদায়ক গোসল করিয়ে দিন।
শিশু অনেক সময় অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে কিংবা খুব বেশি টায়ার্ড হয়েও কান্না কাটি করে। এ অবস্থায় শিশুকে নিরিবিলি পরিবেশে রাখতে হবে। রুমের লাইট কমিয়ে দিতে হবে। ডিম লাইট জ্বালিয়ে দেয়া ভালো। রুমে বেশি লোকজনের উপস্থিতিও অনেক সময় শিশু সহ্য করতে পারে না। হৈ হুল্লোর পূর্ণ পরিবেশে শিশু খুব তাড়াতড়ি দুর্বग হয়ে পরে। নিরিবিলি শান্ত পরিবেশই শিশুর উপযোগী পরিবেশ। তবে শিশু যখন খুব কাঁদে তখন হাল্কা কোন শব্দ করলে সেদিকে শিশুর দৃষ্টি আকৃষ্ট হতে পারে। এতে করে কন্না কমতে পারে।
এটা মনে রাখা খুব জরুরী, শিশুরা আদর যত্ন যেমন চায় তেমনি চায় প্রতি মুহূর্তে নিরাপত্তা। অর্থাৎ প্রতি মুহূর্তেই সে কাউকে না কাউকে কাছে পেতে চায়। রোগ ব্যাধি নেই, অন্য কোন সমস্যা নেই অথচ বাচ্চা সারাক্ষণ কান্না কাটি করছে এমন যদি হয় তবে সেইসকল বাচ্চাদের কোণে কোণে রাখতে হবে। আপর স্পর্শ পেলে কান্না কাটি কমে যাবে। কান্না থামাতে গিয়ে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে জোরে জোরে ঝাঁকুনি দিবেন না। এতে বাচ্চার মস্তিষ্কে আঘাত লাগতে পারে।
ক্রাই ডু চ্যাট নামক একটি জেনেটিক ডিজি আছে যাতে শিশু বিড়ালের মতো করে কাঁদে। ভয়ের কারণ নেই। এই রোগে আক্রান্ত শিশু জন্মের আগে কিংবা অব্যবহিত পরেই মারা যায়।
ডা. ইসরাত শর্মী