দেশের উচ্চশিক্ষা প্রত্যাশীদের বড় অংশেরই লক্ষ্য থাকে মেডিকেল কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পেয়েও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ঘটনা বিরল। তবে এমন ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিয়েই সাফল্যের সাক্ষর রেখেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইস্ট ওয়েস্টের শিক্ষার্থী সামিয়া বিনতে হাসান।
আগামী ২ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ববিদ্যালয়টির ২২ তম সমাবর্তনে যে তিনজন শিক্ষার্থী স্বর্ণপদক পেতে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে একজন কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এ শিক্ষার্থী। তিনি স্নাতকোত্তর পর্যায়ে সর্বোচ্চ সিজিপিএ ৪ অর্জন করেছেন। এর আগে স্নাতক পরায়ে সেরা ফলাফলের জন্য ২০২২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টির ২১ তম সমাবর্তনেও স্বর্ণপদকে ভূষিত হয়েছিলেন সামিয়া।
সামিয়া জানান, ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হবেন। "গোল্ডেন এ প্লাস" নিয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করার পর সুযোগ পেয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলিত পদার্থবিজ্ঞান ( এপ্লাইড ফিজিক্স)। কিন্তু বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিলো তাদের সন্তান বড় হয়ে একজন ডাক্তার হবে। একারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হয়ে ভর্তি হতে হয় একটি মেডিকেল কলেজে। তবে সেখানে আগ্রহ পাননি সামিয়া। শেষপর্যন্ত ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন নিজের পছন্দের বিষয়ে।
ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান লাভ, এসএসসি-এইচএসসিতে 'গোল্ডেন এ প্লাস' এবং ধারাবাহিকভাবে ভালো ফলাফল ধরে রাখার করনে মেধা বৃত্তি নিয়েই বিএসসি ডিগ্রি শেষ করেন সামিয়া। স্নাতকে তার সিজিপিএ ছিল ৩.৯৯। উচ্চশিক্ষার জন্য ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে বেছে নেয়া প্রসঙ্গে সামিয়া বলেন, শিক্ষকদের সহযোগিতাপূর্ণ আচরণ ও মেধাবৃত্তি থাকার কারণে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে বেঁছে নেন তিনি।
এসব কারণে সফলতার সাথে স্নাতক শেষ করার পর স্নাতকোত্তরেও ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন সামিয়া। ডাটা সাইন্সের দিকে আগ্রহ থাকার কারণে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার জন্য বেছে নেন এই বিষয়টিকেই এবং স্নাতকের ন্যায় সাফল্যের সাক্ষর রাখেন স্নাতকোত্তরেও। বর্তমানে তিনি উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার এবং নিজেকে একজন ভালো শিক্ষক হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন।
নিজের সাফল্য-যাত্রা প্রসঙ্গে সামিয়া বলেন, আমার জন্য পথটা কখনো সহজ ছিলো না। নানান প্রতিকূলতার মধ্যেও আমি সব সময় চেষ্টা করেছি লেখাপড়াকে সবচেয়ে প্রাধান্য দিতে৷ ২০২০ সালের জুলাই মাসে আমার মায়ের কঠিন রোগ ধরা পড়েছিল। সেই পরিস্থিতিতে আমার দায়িত্ব বেড়ে যায় কিন্তু ধৈর্য ধরে আমি সবকিছু করেছি এবং তার ফলাফলও ভালো পেয়েছি। তিনি আরো বলেন, আমি বিশ্বাস করি ধৈর্য ধরে এগিয়ে গেলে সব কিছু অর্জন করা সম্ভব । যেভাবে সফলতার সাথে আমি এই পর্যন্ত এসেছি, আমার চেষ্টা থাকবে পরবর্তী ধাপগুলোও যেন আমি এভাবে সর্বোচ্চ সফলতার সাথে শেষ করতে পারি এবং একজন শিক্ষক হিসেবে এই দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারি।
উল্লেখ্য, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের এবারের সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ২৩৫১ শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি প্রদান করা হবে। ইতোমধ্যে সমাবর্তনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মাঝে গাউন, টুপি, ট্যাসেল, উপহার সামগ্রী ও ব্যাগ বিতরণ করা শুরু হয়েছে।