আগামী শনিবার অনুষ্ঠিতব্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ৬ষ্ঠ সমাবর্তনে গ্র্যাজুয়েটরা বক্তব্য রাখতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম।
বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের কাউন্সিল কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
অধ্যাপক ড. নূরুল আলম বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে সমাবর্তনে গ্র্যাজুয়েটদের বক্তব্য দেয়ার তেমন কোন রীতি নাই। আগের সমাবর্তনগুলোতেও গ্র্যাজুয়েটদের বক্তব্য দেয়া সচরাচর দেখা যায়নি। তাছাড়া রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে মূল অনুষ্ঠানের সময় বেশি দীর্ঘায়ত না করায় শিক্ষার্থীদের বক্তব্য দেয়ার সুযোগ থাকছে না।
এছাড়া সমাবর্তন সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য গঠিত ১৫টি উপ-কমিটির কাজ ও সমাবর্তন সংক্রান্ত সার্বিক বিষয় তুলে ধরা হয় এ সম্মেলনে।
এসময় জনসংযোগ কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. মোহাম্মদ মহিউদ্দিনেরর পরিচালনায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. রাশেদা আখতারসহ উপ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবর্তনে বিপুল সংখ্যক যানবাহন ব্যবস্থাপনার বিষয়ে পরিবহন অফিসের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক ছায়েদুর রহমান বলেন, আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য সমাজবিজ্ঞান অনুষদের পূর্ব পাশের পার্কিং লট, সিন্ডিকেট ও সিনেট সদস্যদের জন্য উপাচার্যের বাসভবনের সামনের মাঠ এবং গ্রাজুয়েটদের জন্য স্কুল এন্ড কলেজের দুটি মাঠ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদ তার গাড়িবহর নিয়ে প্রবেশ করবেন। আমন্ত্রিত অতিথিরা জয় বাংলা গেট দিয়ে এবং গ্রাজুয়েটরা প্রবেশ করবেন বিশমাইল গেট দিয়ে। গ্রাজুয়েটদের জন্য স্কুল এন্ড কলেজের সামনে প্রতি ১৫ মিনিট পরপর শাটল বাসের ব্যবস্থা থকবে।
কোনো টেন্ডার ছাড়াই ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সমাবর্তনের প্যান্ডেল তৈরির ব্যাপারে প্যান্ডেল কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, ‘আমরা খুবই অল্প সময় পেয়েছি। এত স্বল্প সময়ে টেন্ডার দিয়ে প্যান্ডেল তৈরি করা সম্ভব হতো না। তাই ডিপিএম (ডিরেক্ট পারচেজ মেথড) ব্যবহার করে প্যান্ডেল তৈরি করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘সমাবর্তনে প্রবেশের জন্য প্যান্ডেলে পাঁচটি প্রবেশপথ থাকবে। সকাল ১১ টায় প্যান্ডেলের গেট খুলে দেয়া হবে। দুপুর আড়াইটার পর কেউ প্যান্ডেলে প্রবেশ করতে পারবে না। মোবাইল, ক্যামেরা, ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, ব্যাগ অথবা কোনো ধরনের বস্তু নিয়ে মূল প্যান্ডেলে প্রবেশ করা যাবে না।’
সমাবর্তনের খাবারের দাম ও মান নিয়ে আপ্যায়ন কমিটির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীর কবির বলেন, ‘এবারের সমাবর্তনে গ্রাজুয়েট ও আমন্ত্রিত অতিথির সংখ্যা প্রায় ১৯ হাজার। আর আমাদের মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে দুপুরের পর। ফলে মধ্যাহ্ন ভোজের দিকে না গিয়ে আমরা প্যাকেটজাত নাশতা দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। বিকালের নাশতা হিসেবে এটিকে যথেষ্ট বলে মনে হয়েছে।’
এদিকে, উইকেন্ড কোর্সের শিক্ষার্থীদের সমাবর্তনের ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি প্রশাসন। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক রাশেদা আখতার বলেন, ‘অন্যান্য বিশ্বদ্যিালয়েও উইকেন্ড শিক্ষার্থীদের সমাবর্তন অংশ নিতে দেয়া হয়। তাই উইকেন্ড শিক্ষার্থীদের সমাবর্তনে অংশ নিতে কোনো বাধা নেই। এছাড়া তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই অংশ।’
এদিকে সমাবর্তনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ২০ ফেব্রুয়ারি বিকাল থেকে বহিরাগত প্রবেশ বন্ধ রয়েছে। ২২ ফেব্রুয়ারি সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক (ডেইরি গেট) বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘গতকাল রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণ স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) নিয়ে নিয়েছে। পোশাকধারী ৫০ থেকে ৬০ জন পুলিশ রয়েছেন। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সার্বক্ষণিক সাদা পোশাকে নজরদারি করছেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি, নিরাপত্তা শাখা, বিএনসিসি এবং রোভার স্কাউটের সদস্যরা সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করবে।’
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৫ সালে ৫ম সমাবর্তনে ৯ হাজার গ্রাজুয়েটকে সনদপত্র প্রদান করা হয়। এবারের ৬ষ্ঠ সমাবর্তনে অংশ নিচ্ছেন ১৫ হাজার ২১৯ জন গ্রাজুয়েট।